হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে কাঁদলেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চ্যালেঞ্জ।
মোঃ জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
আধিপত্য বিস্তার ও ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগর সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকাল ৩ টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতে তার পরিবারের লোকজন, খালা ও খালাতো বোন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ ও তার খালা।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে যাওয়ার আগে আহত এই ছাত্রলীগ নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তিনি হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে কেঁদে ফেলেন। পরিবার ও স্বজনদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন, চরিত্র হনন, মিথ্যাচার ও চারিত্রিক লাঞ্চিত করার বিচার চান। এসময় শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের মা, মেজো ভাই, খালা ও খালাতো বোন উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোড এলাকায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ির পাশে তার খালার বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতেও তাকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাত্ব জখম করা হয়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে।
শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান এবং সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রওনা হওয়ার আগে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে কাঁদতে কাঁদতে গুরুতর আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে মূলত বিরোধ সৃষ্টি হয়। প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্রসস্ত্র, লাঠিসোঁটা, রড, ছুরা সহ হামলা করে গুরুতর আহত করেছে। আল্লাহ রক্ষা না করল আমাকে সেদিনই তারা হত্যা করে ফেলতো। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছি। আমার সাথে আমার পরিবারের লোকজন, খালা ও খালাতো বোন অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের লোকজন বেশকিছু ধরে আমাকে ও আমার সমর্থকদের হামলার চেষ্টা করে। এখনো আমার সমর্থকেরা নিরাপদ না। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা ও বিচার চাই।
চ্যালেঞ্জ বলেন, হামলার ঘটনার আগে বেশকিছু দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। গত কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়ায় এসেছি। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যায়। সেখানে কয়েকজন আমাকে রেকি করছিল। সেখানে থেকে কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে দেখা করি। এরপর আমি আমার খালার বাসায় যায়। সেখান গিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে আমার ওপর হামলা করে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা খালার বাসার ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও তাদের মারপিট করে। আমার কি দোষ? আমার কি অপরাধ? আমি জামায়াত-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এটা কি আমার অপরাধ? তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করেছে। দল ক্ষমতায় থাকতেও আমি হামলার শিকার হলাম। আমি আমার নেতা হানিফ ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছি। করোনাকালীন সময়ে আমি ও আমার ছেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করেছি। তার এই প্রতিদান পেলাম। আমি বিচার চাই, বিচার চাই।
চ্যালেঞ্জ আরও বলেন, কমিটি নিয়ে নোংরামি চলছে। প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা আমাকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করতে চাই। হত্যার উদ্দ্যেশ্যেই সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে। তারা বলেছে, তোর কোনো বাপ তোকে বাঁচাতে পারবে না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু ও অজয় সুরেকা বাপ তোকে বাঁচাতে পারবে না।
জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান বলেন, সাধারণ সম্পাদক চ্যালেঞ্জের জনপ্রিয়তা ও সুশোভিত রাজনীতিতে হিংসায় পড়ে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে আমরা সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষীদের শাস্তি চাই। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে আমরা দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগ অনশন-ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।
এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজগর আলীর বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা, গুটি কয়েক নেতা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকাশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।