-ইকবাল আহমেদ লিটন।
৯ মাসের মরণপণ রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং ২ লাখ মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ও লক্ষ কোটি মানুষের সিমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেদিন বাঙালি জাতির অভ্যুদ্বয়ের লক্ষ্যে যে জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে কোনো শর্ত ছিল না, লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করে একটি অসাম্প্রদায়িক, উদার জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা।
না তিনি না বাংলাদেশ, কেউ আর আগের জায়গায় নেই। একজন মানবী একজন নেতার হাতে বদলে যাওয়া স্বদেশ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। তাঁর পিতার হাত ধরেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। জনকের বাংলাদেশ স্বপ্ন আর আশার প্রদীপ জ্বালালেও অনেক কাজ হয়নি। একে-একে মারা গেলেন দেশের কান্ডারিরা। দৃশ্যপট থেকে তাঁদের বিদায় করা হলো জঘন্য চক্রান্তে।
যারা এদেশের সবচেয়ে বড় দুশমন তাদের ষড়যন্ত্র দেখতে থাকল সফলতার মুখ। একসময় এমন হয়ে গেল এ যেন ছায়া পাকিস্তান। সবকিছুতে গোঁজামিল। কিন্তু সময় কি আর কারো দাস? না ইতিহাস কারো শাসন মেনে চলে? জামায়াত প্রভাবিত বিএনপি যে আসলে কোনো দল না এবং তাদের শক্তির উৎস যে সামরিক ছাউনি আর নেগেটিভ ভোট সেটা পরিষ্কার হওয়ার পর চাকা ঘুরতে শুরু করল। ওয়ান-ইলেভেনকে যে যাই বলুক সে এক আর্শীবাদও বটে। তার হাত ধরে এলো বিএনপি বধের পালা। এরপর আমাদের নেত্রীর উদ্ভাসের শুরু। যা কল্পনার বাইরে চলে গিয়েছিল যে সব প্রত্যাশা বা আশা মরতে শুরু করেছিল তাদের পুনর্জন্ম হয়ে উঠল সময়ের ব্যাপার। এদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকা-ের নাম পনের আগস্ট। সে রাতের বিচার করাও ছিল আইন বিরুদ্ধ। তিনি তা ভাঙলেন। শুধু ভাঙা নয় দেশের কালো অধ্যায় ও রাজনীতি ধ্বংসের খলনায়ক এই খুনিদের যারা হিরো বানিয়েছিল তাদের চোখের সামনে ঝোলানো হলো ফাঁসিতে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত করার পর সুকৌশলে তিনি হাত দিলেন আসল জায়গায়।
ধারণা করা হচ্ছিল, এদের দুর্গে হাত দিলে দেশ নাকি আর দেশ থাকবে না। আস্ফালন টাকার গরম আর ধর্মের লেবাসে মধ্যপ্রাচ্য লবিংয়ে এরা নিজেদের চিরনিরাপদ ভাবলেও আসলে ভেতরটা ছিল ফাঁকা। সে ফাঁকা জায়গাটা তিনি ধরতে পারলেন আপন প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায়। ততদিনে দেশের মানুষও বুঝে গেছে ইতিহাস নির্মল করার সময় দোরগোড়ায়। তাঁর প্রচ্ছন্ন আদেশ ও সহযোগিতায় গড়ে উঠেছিল নতুন এক শাহবাগ। জয় বাংলার এই নবজন্মের কাছে পরাস্ত হলো দানবের দল। ফাঁসিতে গেল মানবতাবিরোধী রাজাকারের দল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কিন্তু এগুতে শুরু করে দিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে এ আরেক অভিযাত্রা। চালের অভাব ভাতের অভাব যে দেশের নিয়তি বলে গণ্য করা হতো সে দেশ জাদুবলে উঠে দাঁড়াল। তার চাল রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এক টুকরো ঝড় বা বন্যা হলে যার রিলিফ ছাড়া চলত না, সে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল ও পাকিস্তানের মতো বৈরীমুখর দেশের বিপদেও সাহায্য দিতে শুরু করল। এ আরেক সুবর্ণ অধ্যায়। খেয়াল করবেন দেশের এই উন্নয়ন আর অগ্রগতি এমনি এমনি হয়নি। এর পেছনে আছে সঠিক নেতৃত্ব। ততদিনে তাঁর চোখেমুখে এসে গেছে দীপ্তি। তাঁকে এখন আর কোন প্রতিক্রিয়া পেছনে টেনে ধরে না। একসময় যেসব দেশের নাম শুনলে আমাদের গায়ে জ্বর এসে যেত, যাদের হাঁকডাকে আমরা থরহরি কম্পে ভুগতাম সেসব দেশের বাঘা বাঘা নেতাদের সুর মিইয়ে গেল। ফোন করে আকুতি জানিয়েও অসুরের ফাঁসি ঠেকাতে পারেনি তারা। কারণ আমাদের নেতা জানান দিয়েছেন আমরা এখন আর কারো রক্তচক্ষুর দাস নই। শেখ হাসিনাই এই নেতা। মাটি থেকে, রক্ত থেকে উঠে দাঁড়ানো সে নারী যিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন এ দেশ ও জাতিকে ইতিহাসের শুদ্ধতা দিতে আর সামনে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তাঁর দ্বিতীয় দফায় জিতে আসাটা ছিল নানা ধরনের ঘটনায় মোড়া এক অধ্যায়। গণতন্ত্রের দুনিয়ায় নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে পরিচয় দেওয়া বিরোধী দলের এক কথা, আমাদের জিতিয়ে না দিলে ইলেকশনে যাব না। তাদের বাধা দেশের মানুষকে জ্বালিয়ে অঙ্গার করা, ধর্ম ব্যবসায়ীদের দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের পরও তাকে টলানো যায়নি। দেশে যখন এসব চলছে বিদেশে তাঁর ভাবমূর্তির খোলতাই হচ্ছে তখন। আগে যারা বাংলাদেশ চিনত না তারা এখন ক্রিকেটার সাকিব বা তামিমের ও মাশরাফি নামে পাগল। আগে যারা ভাবত আমরা ফকিরের দেশ তাদের চোখে ধাঁধা লাগানো কাপড় পোশাক আর গেট আপে হাজির অধুনা বাংলাদেশের মানুষজন।
যেসব নেতা আমাদের সাইডলাইনে বসিয়ে রাখতেন, যেসব দেশে গেলে সরকার প্রধানকে রিসিভ বা সি অফ করত অফিসাররা তাদের নেতারা এখন আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন।
জার্মানি, কানাডা বা আমেরিকা এমনকি ভারতের নেতাদের সঙ্গে আমাদের নেতার ইদানীংকালের ছবিগুলো দেখুন। কাকে বলে আন্তরিকতা আর কাকে বলে নমনীয়তা। এ জাদু কি কেবল জিডিপি আর উন্নয়নের অবদান? জি না। এর পেছনে আছে নেতৃত্বের ক্যারিশমা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারিণী। যে পিতা দেশে আসার আগে ভারত ও বিলেতের সরকারপ্রধানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কথা বলেছেন, তাঁর কন্যাও আজ এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন নিজেকে। যেসব বাংলাদেশী অকারণে তাঁর বিরোধিতা করেন তারা তা জেনেও নিজেদের হীনমন্যতার কারণে তাঁকে মানতে পারেন না। একজন মানুষ কিভাবে বিশ্ব আবহে বড় হয়ে ওঠে? রাতে মদ দিনে বিদেশি পোশাক বা সাজসজ্জায়? আপনি যা আপনি যদি তাই হন যেমন, লালন যেমন, রবীন্দ্রনাথ যেমন, বাউলেরা, তখন স্বদেশ বিদেশ সব জায়গায় আপনার সম্মান অবধারিত। শেখ হাসিনাও তাই। তাঁর পোশাক, ইমেজ আর কথায় তিনি খাঁটি বাংলাদেশী।
দেশের ভাবমূর্তি ও বাংলা সংস্কৃতির ব্যাপারে তাঁর আন্তরিকতা অনেক। এভাবে তিনি বিদেশের মন কেড়েছেন। কথায় বলে দেশের যোগী কষ্ট পায় দেশে। তাঁর বেলায়ও তাই। বাইরে তাঁর যত সুনাম আর প্রভাব। সে দেখে নিন্দুকেরা দেশে সাম্প্রদায়িকতা আর অন্ধত্বের আশ্রয় নেয়। শেখ হাসিনা এখন কারো সেকেন্ডম্যান নন। যেখানে তিনি সেখানেই আলো। দল ও নেতার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে গুণগতমানে। তিনি দলকে ছাপিয়ে ওঠে এসেছেন। এটা তাঁর কৃতিত্ব। যে কারণে দলের দায় নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের অনেক বাইরে তিনি। এটাই রাজাকারদের চোখের বিষ। কিন্তু আমরা জানি তিনি জননীর মতো আগলে আছেন এ দেশ। তাঁর আলোয় বিদেশেও বাংলাদেশের জ্যোতি বাড়ছে। তিনি না থাকলে এর ধারাবাহিকতা টানাও প্রশ্নময় হয়ে দাঁড়াতে পারে। আজ যখন দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা বাড়ছে, যখন তার গায়ে লাগছে উন্নয়নের নতুন হাওয়া, বিশ্বজনীন শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই কোথাও। এটা যারা জানেন কিন্তু মানেন না তাদের ব্যাপারেই সাবধান হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবল পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ভারতের কাছ থেকে ছিটমহল আদায়, সমুদ্র সীমানা বাড়ানো বা ইতিহাস কলঙ্কমুক্ত করার জন্য টিকে থাকবেন না, তাঁর নেতৃত্বের দৃঢ়তা আর কঠিন সময়ে প্রজ্ঞার বিষয়টাও মনে রাখবে সময়। এখন বাংলার মানুষের মনে হয় বিশ্বজনীনতার দিক থেকে তিনি সবাইকে ছাপিয়ে এগিয়ে আছেন। এমনকি পিতাকেও। তাঁর দীর্ঘায়ু ও কর্মমুখর জীবন কামনা করি।
লেখকঃ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ,-ইকবাল আহমেদ লিটন,,সদস্য সচিব ,আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ও অভিযোগ বার্তার প্রধান উপদেশট সম্পাদক।