বার্তা ডেস্কঃ
যিনি নিজের অর্জিত সমস্ত সম্পদ মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করে গেছেন, সেই মহামানব, বাংলার কিংবদন্তী দানবীর রনদা প্রসাদ সাহাকে আজ আমরা স্মরণ করি। শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেও যিনি এক মুহূর্তের জন্যও ভোলেননি সমাজের প্রতি তাঁর কর্তব্যের কথা।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ১৮৯৬ সালে ঢাকার সাভারে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রনদা প্রসাদ সাহা। তাঁর বাবার বাড়ি ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। মাত্র সাত বছর বয়সে বিনা চিকিৎসায় মাকে হারানোর ঘটনা তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে, যা তাঁকে পরবর্তী জীবনে আর্তমানবতার সেবায় অনুপ্রাণিত করে।
কর্মজীবন ও মানবসেবা কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তিনি ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন। কিন্তু অর্জিত অর্থ নিজে ভোগ না করে তিনি তা বিলিয়ে দেন সাধারণ মানুষের সেবায়। তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো আজও মানবতার বাতিঘর হয়ে জ্বলছে।
তাঁর অমর কীর্তি নারীশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি গড়ে তোলেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত এই ট্রাস্টটি তাঁর সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু।
কুমুদিনী হাসপাতাল, মির্জাপুর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটি আজও স্বল্পমূল্যে লাখো মানুষকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ভারতেশ্বরী হোমস নারীশিক্ষার প্রসারে এটি একটি যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান, যা দেশের সেরা বিদ্যাপীঠগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজঃ চিকিৎসা শাস্ত্রে এগিয়ে নেওয়ার এক অনবদ্য উদ্যোগ।
মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ, উচ্চশিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান।
অন্তিম পরিণতিঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ই মে, রনদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য তাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন।
রনদা প্রসাদ সাহা শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী বা দানবীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী ও মানবদরদী দার্শনিক। তাঁর দেখানো পথ আমাদের চিরকাল অনুপ্রেরণা জোগাবে।