মোঃসাইফুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ;
৫ হাজার টাকা জমা দিলেই মাসে ১৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা!
এককালিন ৫০০০ টাকা জমা দিলেই হওয়া যাবে সদস্য। প্রতিটি সদস্য প্রতি মাসে পাবেন ১৫০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা। এর জন্যে ধার্যকৃত বয়স ৫০ হলেও ১০০০ টাকা বাড়িয়ে দিলেই ৪০/৪৫ বছর বয়সীরাও পেতে পারেন এই সুবিধা।
এমনি লোভনীয় উদ্ভট প্রস্তাব নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে হাজির অগ্রণী এজেন্ট লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। লোভনীয় প্রস্তাব হওয়ায় অল্পদিনেই বিপুল সংখ্যক গ্রামের গরীব মানুষেরা ফাঁদে পা দিয়ে দেয়। এই সুযোগে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে পালিয়ে যায় ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ওমর আলী।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানে গেলে প্রধান ফটক তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ছিল ঠাকুরগাঁও উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনের একটি ভাড়া নেওয়া ভবনে।
অর্থ সংগ্রহের সময় জেলা প্রশাসক ও ইউএনও এর নাম ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। তাই সহজেই গ্রাহকেরা আগ্রহী হয়ে উঠে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী কৃষক আবু মোমেন জানান, আমাদেরকে বলা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের এটা নতুন জনসেবা। এই কাজে উপজেলার স্যার নাকি উনার সাথে আছেন। অফিসে গিয়ে দেখি উপজেলার সামনেই উনার অফিস, তাই আর অবিশ্বাস হয়নি।আরেক ভুক্তভোগী জোলেখা খাতুন বলেন, একই ভবনে জেলা মহিলা সংস্থার অফিস। আমি মহিলা সংস্থার অফিসে গেলে অগ্রণী এজেন্ট লিমিটেড দেখতে পাই। বাসায় থাকা ছাগল বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা তাদের দিয়ে স্বামী-স্ত্রী সদস্য হইছি। এই মাসের ভাতার ৩০০০ নিতে আসলে অফিস বন্ধ দেখতে পাই।
ভবন মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে প্রতারক ওমর আলীর বক্তব্যের একটি ভিডিও রাইজিংবিডির হাতে এসেছে। যেখানে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকার বিষয়ে জানাচ্ছেন ওমর। তার প্রকল্প নিয়ে নিয়মিত তাদের সাথে মিটিং হচ্ছে বলেও প্রশ্নের জবাবে জানাচ্ছেন তিনি। সেই সাথে কিছু সার্টিফিকেট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তবে তার দেখানো সার্টিফিকেটগুলো সবই জাল বলে নিশ্চত হওয়া গেছে।
প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নাম শুনে পালিয়ে যাওয়ার আগেই প্রশাসনের দৃষ্টিতে বিষয়টি আনা হলেও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা জানান, ভিডিওতে বলা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে পরিচয় থাকার বিষয়টি মিথ্যা। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা তার নিজের সাথে কোনো পরিচয় না থাকার বিষয়টি নিশ্চত করেন তিনি।
অভিযোগ পেয়েই এসিল্যান্ড অভিসারকে ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। ব্যবস্থা না নেয়ার কারন জানতে চেয়ে জবাবদিহি করা হবে বলে নিশ্চিত করেন এই কর্মকর্তা।