রাজনীতি ও শিক্ষকতায় মেধাবীদের দরকার
-ইকবাল আহমেদ লিটন
একসময় রাজনীতি করতেন মেধাবীরা। ছাত্র রাজনীতি করতেন সাহসী ও ছাত্র সমাজের অধিকার আদায় যারা করতে পারবে এমন ছাত্ররা। স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমি দেখেছি। কারা ছিলেন অগ্রভাগে? সম্প্রতি আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভাষণ আমি বার বার শুনেছি। কতটা সাদামাটা। অথচ সঠিক। কতটা আন্তরিক। অথচ হ্নদয়ক্ষরণের কথা। রাজনীতিতে সবাই ঢুকে পড়ছে। উনি গরীবের বৌয়ের সাথে বিষয়টির তুলনা করেছেন। বলেছেন, গ্রামের গরীবের বৌ সকলের ভাউস। নিরেট সত্য কথা। একসময় যারা রাজনীতিতে এসছেন মামলা হয়েছে। হামলা হয়েছে। জেল খেটেছেন। আজকাল মামলা হলে একজন রাজনৈতিক আরেকজনকে খুনি, চোর এসব উপাধিতে ভুষিত করেন তাহলে রাজনৈতিকরা আজকাল একজন আরেকজনকে বরং শেষ করতে প্রস্তত।
মেধাবীদের কাছে প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। একসময় ছিল নিজেদের মধ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য। আজকাল রাজনৈতিকদের আচরণ দেখে মেধাবীরা রাজনীতিতে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছে যারফলে যে কেউ ঢুকে পড়ছে।
শিক্ষকতায় মেধাবীরা আসে না কারণ স্কেল ইঞ্জিনিয়ারের সমান হলেও শিক্ষকতায় আয়কম, ইঞ্জিনিয়ারের আয়বেশি যারফলে মেধাবী ছাত্ররা এই পেশাকে গুরুত্ব দেয় না। অথচ দেখুন ভাল শিক্ষক মানেইতো ভাল জাতি।
অপরদিকে রাজনৈতিকরা দেশের সকল সময়ের বন্ধু এবং নীতিনির্ধারক। সেখানেও মেধাহীন ও চরিত্রহীন মানুষ ডুকে পড়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেরারা আমাদের প্রতিনিধি হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও এই আক্ষেপ আমাদেরও। এখন প্রশ্নহল কেন মেধাবী আসবে? একজন আরেকজনকে ঘায়েল করার যে শব্দ প্রয়োগ, আইন প্রয়োগ, শাসন প্রয়োগ অতীত হতে দেখে আসছি এখানে মেধাবীরা আসবে না। তাহলে আমাদের রাজনীতির অবস্থাটা কি? আসলে প্রশ্নবোধক—- আমাদের শিক্ষার অবস্থা কি? প্রশ্নবোধক। তবুও যারা রাজনীতি করতে চান তাদের জন্য বলি, ইতিহাসে ফিরে তাকালে দেখা যায়। এইসব রাজনীতির একটি খেলা আর কিছু নয়। যত ত্যাগ তত ক্ষমতা। দেখুন-
১. বাংলাদেশ নামক এই স্বাধীন রাষ্ট্রের স্রষ্টা— জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পাকিস্তানি শাসন-শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেন বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষুকে ভয় করেননি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ— প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর জন্য আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, স্বাধীন জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত হয়েছি।
২. ফিদেল কাস্ত্রোকে : ১৯৫৫ সালে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৫৯ সালে সরকার পতনের পর ফিদেল কাস্ত্রো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শাসন ভার নেয়।
৩. ইন্দিরা গান্ধীকে : সন্তান সহ গ্রেপ্তার করে। সরকার পতনের পর মুক্তি পায় ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের ১ম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮০ সালে ২য় বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
৪. আফ্রিকার প্যাট্রিস লুমুম্বাকে : ১৯৫৯সালে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল, পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
৫. দিলমা রুসেফ : একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ১৯৭০/৭১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জনপ্রিয়তার কারনে এই দিলমা রুসেফ ২০১০সালে ব্রাজিলের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন।
৬. কিম দাই জংকে: ১৯৮০ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে কিম জং দঃ কোরিয়া ফিরে আসেন এবং গৃহবন্দী হন। অবশেষে ১৯৮৮সালে দঃ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
৭. নেলসন ম্যান্ডেলা : ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালে মুক্তি পান। ১৯৯৪ সালে নির্বাচনে ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার ১ম নিগ্রো রাষ্ট্রপতি হন।
৮. অলিউজগুন ওবসানজো : অলিউজগুন ওবসানজো ১৯৯৫ সালে সরকার পতনের পরিকল্পনা করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে তিনি মুক্তি পান। ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওবসানজো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় এবং ২০০৩ সালে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।
৯. আনোয়ার ইব্রাহিম : মালেশিয়ার কারাগারে বন্ধী এবং কারাগার থেকে বের হয়ে জনসমর্থনে রাষ্টপ্রধান হওয়ার পথে আছেন ইতিহাস এমনই। যত ত্যাগ তত ক্ষমতা।
এইরকম আরো হাজার উদাহরণ রয়েছে। আমাদের দেশেও এমন সংখ্যা কম নয়। আমি সেই উদাহরণে যেতে চাই না। আমি বলতে চাই রাজনীতিসহ পৃথিবীর কোন কিছুই ত্যাগ ব্যতিত আসে না। রাজনীতিতে ত্যাগ বেশি, সন্মানও বেশি। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকের বড় বড় কাজ সবই রাজনৈতিকদের কারণে সম্ভব হয়েছে। তাঁদের সন্মান সবার আগে। তাই রাষ্ট্রপতির ভাষণের সূত্র ধরেই আমি বলতে পারি ত্যাগের মাধ্যমে রাজনৈতিক হওয়ার ফলে দেশ সঠিক পথে এগুতে পারে। আমারও বিশ্বাস তাই। আমাদের প্রিয় দেশটি সবসময় সঠিক রাজনৈতিকদের হাতেই থাকুক। সত্যিকারভাবে আমরা যার কাছে নিরাপদ। প্রিয় দেশটির সোনার মানুষ গুলো সত্যিকার রাজনৈতিক মানুষ তৈরীতে সবাই এগিয়ে আসুক। মেধাবীরা রাজনীতি আর শিক্ষকতায় ফিরে আসুক। নাগরিক হিসাবে এটি অন্তরের কামনা।
–লেখকঃ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, -ইকবাল আহমেদ লিটন,সদস্য সচিব,আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ও উপদেষ্টা সম্পাদক বার্তা ২৪ টিভি।