মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান নিরবিচারে গণহত্যার চালিয়েছে তাদের পাক হানাদার বাহিনী।
সেই গণহত্যার জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে এই মানব বন্ধন।
আজ মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করেছেন ‘আমরা একাত্তর’।
এতে সংগঠনের আহবায়ক জনাব ইকবাল হোসেন কচি এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো.নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, উত্তরণ সভাপতি বিমল চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ সমাজকর্মী তাপস কর্মকার, গ্রামীণ শিল্পী সংস্থা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো.ইউসুফ আলী, প্রথম আলো বন্ধুসভা মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আবু সালেহ সালেক, ছাত্র ইউনিয়ন মানিকগঞ্জ জেলা সংসদের সাবেক সহসভাপতি রুমা আক্তার,সাংবাদিক নাহিদুর রহমান হৃদয়, উন্নয়নকর্মী ঋতু রবি দাস প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি ৩ অক্টোবর ২০২২ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনের এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একাত্তরের গণহত্যাকে জাতিসংঘ কর্তৃক গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদান নিশ্চিত করার দাবীতে মহান মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের সকল শক্তিকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানানো হয়।
এসময় বক্তারা আরও বলেন,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ এশিয়ায় ১৯৭১-এ সারা পৃথিবী কাঁপিয়ে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল, এর দ্বিতীয় নজির নেই। বাঙালি জাতির গর্ব করা ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে এখনও কেউ কেউ যখন শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন দুঃখ হয়। পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীরা তা লুফে নিয়ে মাঠে নামবে এটাই স্বাভাবিক। আর এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের তত্ত্বাবধানে সাম্প্রতিককালে সুলতান আলী নামে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে ‘টরম্যানট ট্রুথ ইন ১৯৭১’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হয়। যে বইতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে চরমভাবে হেয় করা হয়েছে।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও বিরোধীদলীয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর যোগসাজশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে সার্চলাইট অপারেশনের নামে এদেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছ পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এই দীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও ৪ লাখের অধিক মা-বোন ধর্ষণের শিকার হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, সম্পদের হিস্যাসহ বিভিন্ন দাবি তোলে। সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালের গণহত্যা, যুব্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগে শুরু থেকেই বিচলিত ছিল পাকিস্তান।
এর পাশাপাশি ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত গ্যারি জে ব্র্যাসের লেখা গ্রন্থ ‘দ্য ব্ল্যাড টেলিগ্রাম–নিক্সন, কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটেন জেনোসাইড’ পাকিস্তানি গণহত্যার তথ্য বিশ্বের সামনে নতুন করে তুলে আনে। আর এতেই পাকিস্তানের গাত্রদাহ শুরু হয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধে এই পরাজিত শক্তি ও তাদের এদেশীয় দোসররা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানি শাসক, সেনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ এবং এদেশীয় জামায়াত-শিবির এখনও মনে করে বাংলাদেশ সৃষ্টি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফসল বা জামায়াতের ভাষায় গণ্ডগোলের ফল।
চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক উন্মুক্ত আলোচনায় ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস ত্রিমূর্তি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও ২০০৮ সালে মুম্বাই গণহত্যার আন্তর্জাতিক বিচার দাবি করেন । ভারতীয় প্রতিনিধি দুনিয়াব্যপী রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন- আঞ্চলিক, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহবান জানান । তবে উক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধির বক্তব্য পাওয়া যায়নি । দেখতে দেখতে স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হলো । এসব অনুষ্ঠানে সব মহলের পক্ষ থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যার বিচারের দাবি উচ্চারিত হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক পরিসরে এই দিবসটি এখনও উপেক্ষিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ এশিয়ায় ১৯৭১-এ সারা পৃথিবী কাঁপিয়ে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল, এর দ্বিতীয় নজির নেই। বাঙালি জাতির গর্ব করা ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে এখনও কেউ কেউ যখন শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন দুঃখ হয়।