মীর শাহাদাৎ হোসাইন,পাবনা প্রতিনিধিঃ
সম্প্রতি বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আমিনপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বাবুর যৌন লালসার স্বীকার মা মেয়ে, মেয়ের আত্মহত্যা শিরোনামে একটি নিউজ জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন সহ বেশ কিছু স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়। সংবাদ টি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে উত্তপ্ত বেড়া – সুজানগর এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ ও ঘটনার বাস্তবতা যাচাইয়ের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নগরবাড়ী ও তার আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযোগকারী আঙুরী একজন প্রভাবশালী দেহ ব্যবসায়ী ও ব্লাকমেইলার।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, আঙুরী চন্ডীপুর এলাকার আনসারের মেয়ে ও বসন্তপুর গ্রামের তোফাজ্জল এর স্ত্রী। সে বিয়ের পর থেকেই দেহ ব্যবসা করতো। নিজের শশুর বাড়ীতে থেকেই নিয়মিত পতিতাবৃত্তি করার কারনে বছর দশেক পুর্বে বেড়া উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তাকে এলাকা ছাড়া করে। তার পর থেকে সে ঢাকায় অবস্থান করে দেহ ব্যবসা ও এই এলাকার সম্ভান্ত্র মানুষ জনকে ব্লাকমেইল করে। এটাই তার একমাত্র পেশা।
অভিযোগকারী আঙুরী’ র ভাসুর মোঃ আনিছ (৫২) বলেন, আমার ছোট ভাই মরহুম তোফাজ্জল (তোফা)’ র সাথে আঙুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সে আমার ভাই এর উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে এমনকি সে বাড়িতে পরপুরুষ নিয়ে এসে দেহ ব্যবসা করতো। তার যৌন কর্ম দেখে স্থির থাকতে না পেরে আমার ভাই আত্মহত্যা করে। আমার ভাই এর মৃত্যুর পর সে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। প্রকাশ্যে তার দেহ ব্যবসা চালাতে থাকে এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার আজিজুল হক আরজুর সহযোগিতায় এলাকাবাসী তাকে এলাকাচ্যুত করে।
পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ০৭ নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য সুসমা রানী সাহা বলেন, আঙুরী ১ যুগ ধরে এলাকা থেকে বিতাড়িত। এর পুর্বে সে এলাকায় দেহ ব্যবসা করতো। সে আমার ভাসুর পুত্র সুমন ( কালা) কে তার শরীরের জাদুতে পাগল করে ব্লাকমেইল করে। কালার যখন অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয় তখন আঙুরী তাকে ব্লাকমেইল করা শুরু করে। ২ লক্ষ টাকা দাবী করে ও প্রকাশ্যে শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত করে যা সইতে না পেরে কালা আত্মহত্যা করে।
নগরবাড়ী ঘাটের বিশিষ্ঠ কয়লা ব্যাবসায়ী রানা হাজী বলেন, আমি একজন কয়লা ব্যবসায়ী। ৩ বছর পুর্বে হেলাল দালালের মাধ্যমে আঙুরী আমার সাথে যোগাযোগ করে। সে জানায় রংপুরে তার দুইটি ভাটা আছে সে কয়লা নিবে। এ বিষয়ে ২-৩ দিন যোগাযোগের পর সে আমাকে ব্লাকমেইল শুরু করে। সে দাবি করে আমি তাকে বিয়ে করেছি আমার পুরো পরিবারকে সে উল্টাপাল্টা বলে ও মোটা অংকের টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে আমি ও আমার পরিবার তীব্র প্রতিবাদ করলে আঙুরী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
নগরবাড়ী ঘাটের ব্যবসায়ী সগীর হোসেন বলেন, ৭ বছর পুর্বে আঙুরী আমাকে কল দিয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন অপবাদ দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি রাগান্বিত হয়ে ওকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি পর্যন্ত করেছি।
রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত এ এম শহিদুল্লাহ’ র ছেলে গোলাম গওজ( ৪০) বলেন, ২০১২-১৩ সালে কন্টাক্টারী নিয়ে ইমান হাজীর ভাই মরহুম ইলিয়াস এর সাথে আমার সমস্যা দেখা দিলে আঙুরীকে দিয়ে আমার নামে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মোহরী রফিকুল ইসলাম এর সহযোগিতায় আমি রক্ষা পাই।
জাতসাখিনী ইউনিয়নের টাংবাড়ি গ্রামের সোহাগ হোসেন বিল্টু বলেন,প্রায় ১৫ বছর পুর্বে বন্ধু স্বপনের মাধ্যমে আঙুরীর সাথে আমার পরিচয়। স্বপনের সাথে আঙুরীর অবৈধ সম্পর্ক ছিল। হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি স্বপন কে আঙুরীর ঘরে আটকাইছে। সেখানে গিয়ে মান বাঁচাতে ৬০,০০০ টাকা দিয়ে স্বপনকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসি। আর এ রকম একটা বেশ্যার সাথে বাবু ভাই কে জড়িয়ে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের কে দাঁত ভাঙা জবাব দিতে নেতাকর্মীদের একত্রিত হওয়ার আহবান জানান তিনি।
বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল আওয়াল (৬০) বলেন, আঙুরী একজন চিহ্নিত দেহ ব্যবসায়ী। সে যুবক দের তার শরীরের যাদুতে ভুলিয়ে ব্লাকমেইল করতো। সে খরিদ্দারদের নিজ ঘরে আটকে রেখে বিয়ের ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিত।
বসন্তপুর গ্রামের রুস্তম বলেন, আঙুরী আমার কাছে চাঁদা দাবি করে না দিলে ধর্ষন মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়।
বসন্তপুর গ্রামের মৃত ফজের শেখের স্ত্রী ডলি (৮০) বলেন, আঙুরীর শরীরের পশমের চেয়ে ভাতার বেশি ছিল।
বসন্তপুর গ্রামের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মমতা (৫২)বলেন, আঙুরী একজন চিহ্নিত দেহ ব্যবসায়ী ও ব্লাকমেইলার। সে মানুষ কে তার যৌন লালসার স্বীকার করে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
বসন্তপুর গ্রামের জালাল শেখের স্ত্রী মাজেদা (৩০) বলেন, আঙুরী একটা লটি ওর কাজ মানুষকে হেয় করা। কত টাকা নিয়ে বাবু চেয়ারম্যান কে বদনাম দিছে সেটা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল কাদের শেখের মেয়ে মিনু খাতুন (২৪) বলেন, আঙুরীর কারনে তার স্বামী ও কালা আত্মহত্যা করেছে। অনেক যুবক হয়েছে মানসিক ভাবে অসুস্থ। সে বিভিন্ন সময়ে অগণিত মানুষ কে প্রতারিত করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এরকম একজন মহিলা কে ব্যবহার করে কারা একজন সম্মানিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কে কলংকিত করছে তা উদঘাটনের দাবি জানান তিনি।
আমিনপুর বেড়ার একাধিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে যেকেউ আসতে পারে, কল করতে পারে ও সেলফি উঠতে পারে। এরকম একটা ছবি দিয়ে কখনোও কারও চরিত্রে কলংক দেওয়া যায় না। আর দেড় মাস পুর্বে আঙুরীর মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, থানায় ইউডি মামলা হয়েছে। সেগুলো কে ইস্যু করে দেড় মাস পরে কাদের ইশারায় এই নোংড়ামো সেই রহস্য উদঘাটনের দাবি জানান তারা।
কাশিনাথপুর, আমিনপুর, নগরবাড়ি, বেড়া সহ পাবনা জেলার সচেতন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের দাবি একজন সম্মানিত জনপ্রতিনিধি কে লাঞ্চিত করতে যারা আড়াল থেকে কাজ করছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক।
বিস্তারিত প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খন্ডের জন্য চোখ রাখুন অভিযোগ বার্তা২৪ এ।