প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতা ও ৩৫ ফুট পরিধি নিয়ে গাছটি আয়েসিভাবে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২৫০ বছর ধরে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো জানান দিচ্ছে সেই বয়সের কথা। গাছের ডালপালাগুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে রয়েছে সবুজের সমারোহ। বলছিলাম ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তে মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত সূর্যপুরী আম গাছের কথা। এশিয়ার সর্ববৃহৎ আম গাছ হিসেবে এই গাছের বেশ পরিচিতি রয়েছে। জেলা শহর থেকে এ গাছের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কি.মি। গ্রীষ্মকালে আমে ভরে যায় এই গাছ। প্রায় বছরই এই গাছের শীর্ষভাগ থেকে শুরু করে নুয়ে পড়া ডালের পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় অসংখ্য আম। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম। জেলায় এবার কয়েকবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড়-বাতাসে আম, লিচুসহ নানা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও এ গাছটিতে থোকায় থোকায় এখনো ঝুলে আছে অসংখ্য আম। আর তাই এই গাছ থেকে এবছর লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রয়ের আশা করছেন গাছটি লিজ নেওয়া ব্যক্তি। প্রকৃতির নিজ খেয়ালে বেড়ে ওঠা সবুজে ঘেরা গাছটির ডাল পালা ও আম সকলের দৃষ্টি ও মনকে আর্কষণ করে। তাই এক নজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। ইউটিউবে এই গাছের অনেক ভিডিও দেখেছিলেন আমেরিকান প্রবাসী মো. ওমর ফারুক। দেশে ফিরেই রাজশাহী থেকে গাছটিকে এক পলক দেখার জন্য তিনি বালিয়াডাঙ্গী আসেন। তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে আমেরিকা থেকে বাড়ি এসেছি। আজ শুধু এই গাছটিকেই দেখার জন্য এখানে এসেছি। দেখে অনেক ভালো লাগলো। গাছটি অনেক পুরনো আর অনেক জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। প্রচুর আম ধরেছে যা বলার মতো না।’ এমনি আরেক আমেরিকান প্রবাসী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এতো পুরনো আম গাছ এখনো আছে, যা কল্পনাই করা যায় না। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না, যে পুরনো গাছে এতো আম ধরে। কেউ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করবে না। যা দেখে আমি খুবই মুগ্ধ।’ পরিবার নিয়ে বগুড়া থেকে এসেছেন পাপরী সেন। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন থেকে এই আম গাছ দেখার জন্য ইচ্ছে ছিল। তাই বগুড়া থেকে এসেছি। গাছটি দেখে খুব ভালো লাগছে। এখানে যারা আসবেন, তাদেরও ভালো লাগবে আশাকরি।’ শহর থেকে ঠাকুরগাঁও মাদার তেরেসা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মেধা মনি। বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ঘুরতে এসে মেধা মনি জানায়, এর আগে কখনোই এতো বড় গাছ চোখে দেখিনি। এখানে এসে দেখলাম। দেখে অনেক ভালো লাগলো। উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমানে এ গাছের মালিক দুই ভাই নূর ইসলাম ও সাইদুর রহমান। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় আম ব্যবসায়ী সলেমান আলী নামে এক ব্যক্তি ৩ বছরের জন্য গাছটি লিজ নিয়েছেন। গত বছর আমের ফলন কম হওয়ায় কিছুটা লস হয়েছে তার। এবার গাছে ব্যাপক আমের ফলন হওয়ায় লাভের আশা করছেন তিনি। সলেমান আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আর মাত্র ২০-২৫ দিন গেলেই আম গুলো পরিপক্ক হবে ও বাজারজাত করা যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি না হলে ৮০-১০০ মণ আম হতে পারে বলে ধারণা করছি। এমন হলে সহজেই তা এক লাখ টাকার বেশিতে বিক্রি করতে পারবো।’ বিখ্যাত এই আম গাছটির বয়স প্রায় ২৪০-২৫০ বছরের মতো উল্লেখ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহা. যোবায়ের হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গাছটি ব্যক্তিমালিকাধিন হলেও আমি এই উপজেলায় যোগদানের আগে সেখানকার উন্নয়নের বিষয়ে এক পরিকল্পনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’