পাবনা প্রতিনিধিঃ ৭২ ঘন্টার মধ্যে হেমায়েতপুরের চাঞ্চল্যকর সাইদার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহনকারী ৬ (ছয়) জন দূর্ধর্ষ আসামী বিদেশী পিস্তল, চাকু ও অন্যান্য আলামত সহ গ্রেফতার। আলোচিত ব্যবসায়ী ও পাবনা পৌর আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য সাইদুর রহমান সায়দার মালিথা (৫৫), পিতা-মৃত- হারান মালিথা, গ্রাম-প্রতাপপুর, থানা ও জেলা-পাবনা, গত ০৯ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর অনুমান ০১.০৫ ঘটিকার সময় প্রকাশ্যে দিবালোকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে পাবনা থানাধীন চর বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামস্থ বাঁধের চার রাস্তার মোড়ে জনৈক হেলাল এর চায়ের দোকানের সামনে রাস্তার উপর গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ সংক্রান্তে পাবনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রজু হয় যাহার মামলা নং-২০ তারিখ-০৯/০৯/২০২২ ইং ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আকবর আলী মুনসী পাবনা মহোদয়ের নির্দেশক্রমে হত্যাকান্ডের মুল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) জনাব মোঃ মাসুদ আলম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মোঃ রোকনুজ্জামান এর নেতৃত্বে এসআই(নিরস্ত্র) অসিত কুমার বসাক, ডিবি পাবনা এবং সদর থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন, কিলিং মিশনে অংশগ্রহনকারী আসামীদের গ্রেফতারের জন্য যৌথ আভিযানে নামে। আভিযানিক দল আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কক্সবাজার, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে কিলিং মিশনে অংশগ্রহনকারী ৬(ছয়) জন দূর্ধর্ষ আসামী: আনোয়ার আহম্মেদ স্বপন(৪২), পিতা মোঃ আশরাফ উদ্দিন, গ্রাম-গাফুরিয়াবাদ, থানা ও জেলা পাবনা, মোহাম্মদ আশিক মালিথা(২৮), পিতা মৃত কালাম মালিথা, গ্রাম-চক ছাতিয়ানি, থানা ও জেলা পাবনা, মোঃ রিপন খান(২৭), পিতা মোঃ শাজাহান খান, গ্রাম-কাশিপুর, থানা ও জেলা পাবনা, মোঃ নুরুজ্জামান রাকিব(২৪),পিতা মোঃ আকবর হোসেন, গ্রাম-মাটি সড়ক গোপালপুর,থানা ও জেলা-পাবনা, মোঃ ইয়াসিন আরাফাত ইস্তি(২৬),পিতা মোঃ রমজান আলী,গ্রাম-মাটি সড়ক গোপালপুর, থানা ও জেলা পাবনা, মোহাম্মদ আলিফ মালিথা(২২), পিতা-মৃত আব্দুল হাকিম মালিথা, গ্রাম-চক ছাতিয়ানি, থানা ও জেলা-পাবনাদেরকে আটক করা হয়।
আসামীদের হেফাজত হইতে উদ্ধারকৃত আলামত, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি বিদেশী পিস্তল এবং ০৩(তিন) রাউন্ড তাজা গুলি, ০২ রাউন্ড ফায়ারকৃত কার্তুজ, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি বার্মিজ টিপ চাকু,
ভিকটিমের উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০৩টি মোটরসাইকেল(একটি RTR, একটি FZS এবং একটি Avernzer মোটরসাইকেল), হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আসামীদের ০৫টি মোবাইল এবং ১০টি সিম।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা পুলিশের নিকট হত্যাকান্ডের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায় যে, হেমায়েতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মালিথা চেয়ারম্যান থাকা কালে তার চাচাতো ভাই সাইদার মালিথা সহ তার লোকজনদের অনুমান ৬০/৭০ বিঘা সম্পত্তি জোর পূর্বক ভোগ দখল করে আসছিল।গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আলাউদ্দিন মালিথা হেরে গেলে উক্ত সম্পত্তি তার চাচাতো ভাই সাইদুর রহমান সাইদার মালিথা ও তার লোকজন তাদের দখলে নিয়ে চাষাবাদ করে। উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় সময় তাদের মধ্যে ছোট খাটো মারামারির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ঘটনার আগের দিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান এর ভাই সঞ্জু মালিথাকে হেমায়েতপুর মন্ডল মোড়ে সাইদার মালিথার লোকজন মারধর করে। এতে আলাউদ্দিন মালিথা ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদার মালিথাকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং সেই মোতাবেক আলাউদ্দিন মালিথার বাড়ীতে এজাহারনামীয় আসামীদের সঙ্গে বৈঠক করে আলাউদ্দিন মালিথার ভাতিজা আনোয়ার আহম্মেদ স্বপনকে হত্যার দায়িত্ব দেয়। তখন আনোয়ার আহম্মেদ স্বপন উপরোক্ত আসামীদের নিয়ে সাইদার মালিথাকে হত্যা মিশনে অংশগ্রহন করে। আনোয়ার আহম্মেদ স্বপন নিজে তার নিকট থাকা পিস্তল দিয়ে সাইদার মালিথাকে গুলি করে ও গ্রেফতারকৃত অপর আসামীরা তাকে ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল হইতে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীদের স্বীকারোক্তিমতে আসামীদের হেফাজত হইতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত উপর্যুক্ত আলামত গুলো উদ্ধার করা হয়।