_____________________ কাজী এ কে এম রাসেল।
বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে কতোটা ধারালো শব্দ আছে এবং তরবারির চেয়ে কতোটা তীক্ষ্ণতায় কবিতার মাধ্যমে তা ব্রিটিশ মসনদে কতোটা জোরালো ভাবে আঘাত হানা যায়-তা মাত্র ২৩ বছর বয়সে ধুমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতায় বুঝিয়ে দিলেন কবি।
এই কবিতায় রুপক বর্ণনায় কুঠারাঘাত করলেন ব্রিটিশ মসনদে।এ যেনো এক স্বাধীনতার হাহাকার থেকে লেখা মহাকালের ডাক।বিনিময়ে পেলেন রাজদ্রোহিতার অপরাধে কারাদন্ড। ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তথা স্বাধীনতার জন্য কবিতা লিখে জেলে গিয়ে প্রমাণ করলেন কবিতাও হতে পারে জেলে যাবার অন্যতম মাধ্যম।
অন্যায়,শোষন নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বিপ্লব দেশপ্রেমের উদ্দীপনায় ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে কবিতা লিখে হলেন বিদ্রোহী,তারুণ্যের জয়গান গেয়ে তারুণ্যের কবি,প্রেমের বারতা গেয়ে হলেন নিবিড় প্রেমের কবি,অসাম্প্রদায়িক বিশ্বের স্বপ্ন দেখা সাম্যবাদী মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি,বাংলাদেশের রণসঙ্গীতের রচয়িতাও তিনি।
আজ এই অসুস্থতাজনিত কারণে অকালে কলম ছুড়ে ফেলা কবির প্রয়াণদিবস।
কবিকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
নিপীড়িত জনতার ঘামে শ্রমে প্রেমে সাম্যে দ্রোহে নজরুল ছিলেন থাকবেন।
কবির অধিকাংশ ভিডিওতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবার পর তার অসুস্থতা আর নির্জীব বাকহীনতার ছবিই বেশি দেখা যায়।
অথচ বাস্তবে এই মানুষ টি ছিলেন বহুমুখী বিস্ময়প্রতিভার অধিকারী,শত গুণের সমন্বয় ছিলো তার মাঝে।তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা।
১৯৩৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “ধ্রুব” চলচ্চিত্রে কবি দেবর্ষি নারদের ভুমিকায় অভিনয় করেন।
এই ছবিতে কবি সঙ্গীত পরিচালনাও করেন।এই দৃশ্যগুলোতে তার চাঞ্চল্য দেখা গেছে।এই রুপেই দেখতে চাই।নির্জীব অসুস্থ নির্বাক ছবি কবির প্রকৃত রুপ নয়।
হিন্দু মুসলিম উভয় ধর্মের তৎকালীন চলমান দোষ-ত্রুটি নিয়ে লিখেছেন,তাই অসাম্প্রদায়িক কবিকে তৎকালীন হিন্দুরা বলত ‘যবন’, মুসলমানরা বলত ‘কাফের’…
কবি মজা করেই বলতেন,’ও দুটোর কোনোটাই আমি নই”
তিনি শুধু তৎকালীন হিন্দু মুসলমানদের গালাগালি কে গলাগলিতে রুপান্তর করতে চেয়েছিলেন।
তার লেখা অগণিত শ্যামাসঙ্গীত আর গজল আজো মানুষ স্মরণে রেখেছে।
তিনি ই শত কষ্টের মাঝে থেকেও এদিক থেকে তিনি ভাগ্যবান,আজীবন মুক্তির গান গেয়ে তিনি ব্রিটিশ থেকে উপমহাদেশের স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা দেখেও গিয়েছেন।
নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন, যার প্রভাব তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। সেই সময়ে ধর্মান্ধ মুসলমানদের পথ প্রদর্শন,হিন্দু সমাজের জাতি বিভেদ দূরসহ এবং হিন্দু মুসলমান এর দাঙ্গা থামিয়ে তিনি পুনর্জাগরণের ডাক দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল একজন বলিষ্ঠ নেতার মতো।
চির উন্নত শির..বিস্ময়প্রতিভা…সাম্য,মানবতা ও বিদ্রোহের কবির প্রয়ান দিবসে মহান আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
“ধুমকেতুর কভু পতন হয়না,বারবার বিচ্ছুরিত হয় আলোকসভায়”
কবির প্রয়াণদিবসে কবিকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।