অভিযোগ বার্তা নিউজ ডেক্সঃ
দানে কখনো কমে না বরঞ্চ বাড়ে এই মূলমন্ত্র যিনি ধারণ করতেন সেই মহান দানবীর মরহুম আশেক মাহমুদ তালুকদারের
সংক্ষিপ্তজীবনীঃ
আজ ১৩ই আগস্ট দানবীর মরহুম আলহাজ্ব আশেক মাহমুদ তালুকদারের মৃত্যু বার্ষিকী । ১৯৬০ সালে ১৩ই আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন ।
১৮৭০ ইং সালে জামালপুর জেলা মাদারগঞ্জ উপজেলায় গাবের গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । ওনার পিতার নাম মরহুম শাহ মাহমুদ তালুকদার মাতার নাম গুলজান বিবি এবং স্ত্রীর নাম সুখজান বিবি । উনি যখন খুব ছোট ছিলেন ওনার পিতা ইন্তেকাল করেন ।
মরহুম আলহাজ্ব আশেক মাহমুদ তালুকদার ছোট বেলা থেকেই খুব চৌকস এবং সাহসী লোক ছিলেন । জীবন সংগ্রামে কখনো হেরে যাননি । তাঁর বনাঢ্য জীবন ছিল উজ্জ্বল । তিনি জোতদার এবং প্রচুর সম্পত্তির মালিক ছিলেন । ওনার চারটি তালুকদারি স্টেট ছিল । সব চেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার ঐ সময় অনেক জোতদার তালুকদার জমিদাররা নেশা আনন্দ ফুর্তি করে গা ভাসিয়ে দিতেন কিন্তু তিনি ছিলেন সম্পুর্ণ ব্যাতিক্রম । তিনি তার ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষিত সৎ আদর্শবাদী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন ।
মরহুম আলহাজ্ব আশেক মাহমুদ তালুকদার অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন । মাদারগঞ্জ ছিল অবহেলিত নদীমাতৃক গরীব এলাকা, ছিল না কোন রাস্তা ঘাট চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যেত তিনি ১৯০০ ইং সালে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে তাঁর নাম অনুসারে মাদারগঞ্জ আশেক মাহমুদ দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন । ওনার বাবার নামে মাদারগঞ্জ বালিজুড়ি এস এম ( শাহ মাহমুদ) সিনিয়ার মাদ্রাসা স্থাপন করেন। অনেক রাস্তা ঘাট এবং সরকারী প্রতিষ্ঠান করার জন্য অনেক জমি দান করেছেন । নিজ বাড়িতে ইংরেজ আমলে মোগল স্থাপত্য কারুকাজ করা বিশ হাজার টাকা খরচ করে মসজিদ তৈরি করেন । ওনার নিজ বাসভবন আশেক মনজিল কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো দাড়িয়ে আছে ।
যখন জামালপুর অত্র এলাকায় কোন কলেজ ছিল না লেখা পড়া করতে কলকাতা বা অন্য কোথাও দূরে যেতে হত । অনেকেই এবং গরীব ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনার কোন সুযোগ ছিল না তাঁর বড় ছেলে কাজী ইসহাক উদ্দিন তালুকদার (যিনি আমার পিতা) তখনকার জামালপুর মহকুমা প্রশাসক পানাউল্ল্যা সাহেবকে সাথে নিয়ে পিতাকে অনুরোধ করেন জামালপুরে একটা কলেজ দেওয়ার জন্য । বড় ছেলের অনুরোধে তার নিজ নামে জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন । যা আজ জামালপুর সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজ হিসেবে খ্যাত ।
আশেক মাহমুদ তালুকদারের রাজনৈতিক জীবনটাও ছিল উজ্জ্বল শেরেবাংলা ফজলুল হকের ডাকে লাহোর দিল্লিতে মিটিংয়ে কয়েক বার গেছেন । ওনার নিজ বাড়িতে অনেক নেতার আগমন করেছেন তার মধ্যে শেরেবাংলা ফজলুল হক মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সহ আরো অনেকই । তিনি বালিজুড়ি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ।
মরহুম আলহাজ্ব আশেক মাহমুদ তালুকদারের চার ছেলে দুই মেয়ে ।
ছেলেদের নাম প্রয়াত আইনজীবী কাজী ইসহাক উদ্দিন তালুকদার , মরহুম ডাক্তার আফতাব উদ্দিন তালুকদার মরহুম সামছুল হুদা তালুকদার মরহুম সামসুজ্জুহা তালুকদার, মেয়েদের নাম-লতিফুন নেসা ও আমেনা বেগম ।
আশেক মাহমুদ সাহেবের ছেলেরাও পিতার মতো অনেক দান করে গেছেন । পিতার নাম অনুসারে মাদারগঞ্জ এ এম (আশেক মাহমুদ) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । আমার পিতা কাজী ইসহাক উদ্দিন তালুকদার ১৯৬৭ইং সালে ইন্তেকালের পর ১৯৬৮ইং সালে আমার তিন চাচার নাম অনুসারে মাদারগঞ্জ এ এইচ জেড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা আজকে মাদারগঞ্জ এ এইচ জেড সরকারী কলেজ হিসেবে পরিচিত ।
মরহুম আলহাজ্ব আশেক মাহমুদ তালুকদার ও ওনার ছেলেরা আরো অনেক দান এবং জনহিতকর কাজ করে গেছেন । আর একটি কথা না বললেই নয় যার অক্লান্ত চেষ্টায় যিনি পিতাকে বলেছিলেন আমি আপনার কোন স্বয় সম্পত্তি চাই না আপনি জামালপুরে একটি কলেজ দিয়ে দেন যিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে পযন্ত কলেজের উন্নয়নের জন্য পরিশ্রম করেছেন দুঃখের বিষয় সেই বড় ছেলে কাজী ইসহাক উদ্দিন তালুকদারের নামে কোন প্রতিষ্ঠান নেই । যাদের কলেজের ব্যপারে কোন অবদান নেই তাদের নামে কলেজ হোস্টেল গুলোর নাম দেওয়া হচ্ছে । আমি কাউকে খাটৌ করছি না তারাও সম্মানিত ব্যক্তি দেশ ও জাতির জন্য তাদের অবদান অপরিসীম ।
আজ মৃত্যু বার্ষিকীতে মরহুম আশেক মাহমুদ তালুকদারের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং দোয়া করি মহান আল্লাহ্ তা আলা ওনাকে জান্নাতবাসী করুণ ।