মোঃ সাইফুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক গ্রুপ ‘উদ্যোক্তা সূচি’র আয়োজনে ঠাকুরগাঁওয়ে নারীদের হাতে তৈরি করা পণ্য নিয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী উঠান মেলা।
সোমবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও অডিটোরিয়াম বিডি হল মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের শুরুতেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে জেলার নারীদের সমন্বয়ে ঠাকুরগাঁও ‘উদ্যোক্তা সূচি’ ফেসবুক গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। গ্রুপটিতে বর্তমান উদ্যোক্তার সংখ্যা ১৯ হাজার। বাড়িতে বসে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের হাতের তৈরি হরেক রকম মুখরোচক খাবার, কুশিপণ্য, বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকসহ নানা রকম পণ্য বিক্রি করেন নারীরা। এই মেলায় উদ্যোক্তা সূচি গ্রুপের নারী উদ্যোক্তরা মোট ২৫টি স্টল দিয়েছেন। মেলাটি চলবে ১২ জুলাই রাত পর্যন্ত। মেলায় হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয় করতে ছুটে আসছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। এ ধরনের আয়োজনে উদ্যোক্তাদের পথকে আরও সহজ ও প্রসারিত করবে বলে মনে করছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
জানতে চাইলে জান্নাতুন ফেরদৌসী নামের এক উদ্যোক্তা নারীরা যে পিছিয়ে নেই তা এই মেলার মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করছি। আমরা নারীরাও ছেলেদের মতো অনেক কিছুই করতে পারি। আর মেলার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরী করা পণ্যের প্রসার বাড়বে ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ‘উদ্যোক্তা সূচি’ গ্রুপের এডমিন রোজিনা আক্তার বলেন, ‘স্বল্প পুজিঁতে যাতে নারী উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বচ্ছল হতে পারে ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে সেই লক্ষ্যেই এই মেলার আয়োজন এবং সেভাবেই ‘উদ্যোক্তা সূচি’ গ্রুপটি কাজ করে যাচ্ছে। এর আগে তিন মাস অন্তর অন্তর এমন মেলার আয়োজন করা হলেও এবারের মেলাটি বড়সড়ভাবে করা হয়েছে। এই গ্রুপের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পণ্য তৈরী করতে ফ্রিতে প্রশিক্ষ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
মোছা. মনিকা আক্তার নামে মেলায় আগত এক ক্রেতা বলেন, অনলাইনের অনেক কিছু অনেকে বিশ্বাস করতে পারে না। বিশেষ করে পণ্যের মান নিয়ে অনেকে সংশয় হয়। কিন্তু এই মেলার মাধ্যমে তাদের পণ্যগুলো সরাসরি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের। উদ্যোক্তা সূচি এমন উদ্যোগ নেওয়া ভালো হয়েছে। এতে করে তাদের পণ্যের গুণগতমান সম্পর্কে ক্রেতারা অবগত হচ্ছে। তাছাড়া এভাবে তাদের প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মেলায় অশংগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তা মরিয়ম নুরী বলেন মেলায় পণ্য বিক্রয় হোক বা না হোক ক্রেতারা সরাসরি আমাদের পণ্যগুলো নিজের হাতে নেড়েচেড়ে দেখবে ও জানবে যে আমরা ঘরে বসে কী ধরণের কাজ করছি। মূলত মেলার মূল উদ্দেশ্যই এটি।’
এভাবে একজন নারী উদ্যোক্তা অর্থনীতিতে কীভাবে ও কতোটা ভূমিকা রাখতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে পুরুষদের থেকে নারীরা পিছিয়ে থাকলেও এখনকার মেয়েরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। ঘরে বসেও অনেক ধরণের কাজ করছে। এতে করে নারীদের মাধ্যমে অবশ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। উন্নয়নের জন্য নারী পুরুষ উভয়কেই পরিশ্রম করতে হবে। সেটা ঘরে বসেই হোক আর বাইরে হোক।’
অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধনীতে এসে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নজমুল হুদা শাহ এ্যাপোলো বলেন এই জনপদ এক সময় মঙ্গাপীড়িত হিসেবে সারা বাংলাদেশে পরিচিত ছিল। এখন আমরা তা থেকে বেড়িয়ে এসেছি। তার কারণ হলো নারীদের সম্পৃক্ততা। এ অঞ্চলের নারীরা প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণ করার ফলে অর্থনৈতিক মুক্তি মিলেছে। আমরা আর মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবে পরিচিত নই। এখন আমরা অনেক উন্নত পর্যায়ে এসেছি। এর জন্য নারীর অবদানকে অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই।
নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মধ্যমে এ অঞ্চলের পণ্যের বিকাশ ঘটাতে পারলে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে তারা আরও বড় ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।