ইয়াছিন আলী খান
ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় স্থানান্তর করা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। শহরের অদুরে রহমতবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে কার্যালয় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া করা হলেও দলিল লেখক,ভেন্ডার সমিতির অনেকেই তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি শহরের ভেতর বর্তমান কার্যালয়ের আশ-পাশে যে কোনো বাড়িতে কার্যালয় স্থানান্তর করা হোক। ভাড়া দেয়ার মতো কয়েকটি বাড়ি ওই রোডে রয়েছে।এতে
জন সাধারণ উপকৃত হবে।
ছাতক উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর এলাকায় গণপুর্ত বিভাগের একটি ভবনে (কোর্ট ভবন)দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এ ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে। এখানে দলিলাদি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ভবন নির্মাণের পর থেকেই এই ভবনে কোন সংস্কার কাজ হয়নি। সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় স্থাপনের পর ও কোন সংস্কার কাজ হয়নি। এতে করে এই ভবনের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। বিগত ও বর্তমান সাব রেজিষ্ট্রারদের চরম আবহেলার কারণে ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।ভবনের ২ পাশে ঝোপ-ঝাড় লেগে রয়েছে। ভবনটি সংস্কার করা হলে আরো দীর্ঘ দিন এখানে অফিস পরিচালনা সম্ভব।
ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের ভবনে রয়েছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-অনুষ্টানিক কার্যালয়,উপজেলা যুব উন্নয়ণ কর্মকর্তার কার্যালয়সহ পাশে রয়েছে একাধিক সরকারি কার্যালয়,মসজিদ,মার্কেটসহ সরকারি বে- সরকারি স্থাপনা। দলিল লিখকদের২ টিশেড,অফিসের পাঞ্জেগানা মসজিদ ও শৌচাগার। ভাড়া বাড়িতে অফিস স্থানান্তর হলে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ৩ টি মার্কেট। চা- নাস্তার দোকান,ভাতের হোটেল,কম্পিউটার, ফটোস্ট্যাড ও স্টেশনারি দোকান। সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস চললেই এসব দোকান-পাঠ চলে। অর্ধ শতাধিক পরিবারের রুটি-রোজির ব্যবস্থা এই সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসকে ঘিরেই।সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস স্থানান্তর হলেই এসব পরিবারের রুটি-রোজির পথ বন্ধ হয়ে পড়বে।
সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় শহরের অদুরে স্থানান্তরের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন ওই রোডের ব্যবসায়িরা। ব্যবসায়ি রেদোয়ান আহমদ,মতিউর রহমান, আব্দুস শহিদ, আরজ মিয়া জানান,অফিস স্থানান্তর করা হবে এটি সরকারি সিদ্ধান্ত। কিন্তু জনস্বার্থ ও আমরা যারা ব্যবসা করি তাদের দিক বিবেচনা করা হোক। এখানে সকলের সুবিধা বিবেচনা করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে যেখানে সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় স্থানান্তর করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে এতোসব সুবিধা নেই। দলিল লিখকরা দলিল নিয়ে বাজারের কোথাও এসে কম্পিউটারে লিখে আবারো অফিসে যেতে হবে। সরকারি লেন-দেনের জন্য সোনালী ব্যাংকের শাখাও অনেক দূরে। সেখানের আবাসিক এলাকায় এতকিছু করাও সম্ভব নয়। পাবলিক শৌচাগার ও এখানে নেই। শহরের নিচু এলাকা এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। কাজেই শহরের মধ্যে বা উপজেলা পরিষদ এলাকায় যেকোনো ভাড়া বাড়িতে সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় স্থানান্তর প্রয়োজন। আশ-পাশে কার্যালয় স্থানান্তরে মতামত দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। তিনি বলেছেন, কিছু সময় নিয়ে হলেও বর্তমান কার্যালয়ের আশ-পাশে কার্যালয় স্থানান্তর করা প্রয়োজন। সরকার ও জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় এনে কার্যালয় স্থানান্তর করতে হবে।
ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে শতাধিক দলিল লিখক তালিকাভুক্ত থাকলেও ৫৫ জন দলিল লিখক রেগুলার আছেন। দলিল রেজিষ্ট্রারির ঝামেলা ও এখানে বেশি। বর্তমান সাব-রেজিষ্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা ছাতকে সপ্তাহে রবিবার ও সোমবার ২ দিন অফিস করেন।ফলে এখানে প্রচুর ঝামেলার সৃষ্টি হয়।
কার্যালয়টি শহরের অদুরে স্থানান্তরের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কার্যালয়ের নিবন্ধিত অধিকাংশ দলিল লিখক ও ষ্টাম্প ভেন্ডার জানান,নতুন স্থানে তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। সেখানে লক্ষ-লক্ষ টাকার লেনদেন হবে এখানে নেই কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
ভবনের অবস্থা নাজুক,বন্যা সহ বিভিন্ন অজুহাতে কার্যালয় স্থানান্তর করা হচ্ছে কিন্তু বর্তমান কার্যালয়টি স্থানান্তর না করে সংস্কার করা জরুরি। নতুন ভাড়া বাড়িতে পানির ব্যবস্থা নেই এবং অন্য একটি বাড়ির ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। প্রায় পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে কার্যালয় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেখানে সীমাহীন দুর্ভোগ পড়তে হবে অফিস সংশ্লিষ্টদের।তারা দাবি করেন সাব-রেজিষ্ট্রারও ২/৩ জন দলিল লিখকের সুবিধার কারণেই ওই এলাকায় কার্যালয় স্থানান্তর করতে যাচ্ছেন। জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। এখানে কমিশন বানিজ্যের একটি বিষয় রয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
ছাতকের সাব-রেজিষ্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারি আব্দুর রহিম জানিয়েছেন,কার্যালয়ের জন্য শহরে কয়েকটি বাড়ি দেখা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা রেজিষ্ট্রার মফিদুল ইসলাম জানান, যে ভবনটিতে ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয় ওই ভবনের অবস্থা ভালো নয়। কাজেই কার্যালয়টি স্থানান্তরের প্রয়োজন। কার্যালয় কোথায় স্থানান্তর করা হবে এ বিষয়ে স্থানীয় সাব-রেজিষ্ট্রারের মতামতকে প্রধান্য দেয়া হবে। ইতিমধ্যে একটি স্থান চয়েস করা হয়েছে এবং মালিকের সাথে আলোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে রেজিষ্ট্রেশন পরিদর্শক (সিলেট বিভাগ)
মোস্তাক আহমদ জানান, অচিরেই সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের নিজস্ব ভবন হবে। সাময়িক সময়ের জন্য ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় স্থানান্তর করা হচ্ছে।দলিল লিখক,ভেন্ডার সহ আগত লোকজনের সুবিধা বিবেচনা করে কার্যালয় স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মহা পরিদর্শক নিবন্ধন (আই জি আর) শহীদুল ইসলাম ঝিনুক জানান,ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য অফিস ভাড়া নেয়া হবে। এ ব্যাপারে তদন্ত ও বাছাই চলছে । স্থানীয় সাব -রেজিষ্ট্রার এবং জিআর সহ কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।