রেশমা আক্তার রিয়া , পঞ্চগড় প্রতিনিধি
চাকরির জন্য দেয়া টাকা ফেরতসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে প্রতারকের বাড়িতে লাশ রাখার ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড়ে । ঘটনাটি ঘটেছে জেলার সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধানপাড়া গ্রামে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ওই প্রতারকের বাড়িতে লাশ নিয়ে অনশন করেছেন এলাকাবাসী । রাত প্রায় ৩ টা পর্যন্ত অনশন চলে। প্রতারকসহ পরিবারের লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পলাতক ছিল। পরে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রতারক সভাপতি।
জেলার সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধানপাড়া দাখিল মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতি হোটেল ব্যবসায়ী জুলফিকার আলম প্রধান দুই বছর আগে মাদরাসার লাইব্রেরীয়ান পদে জাকিরুল ইসলামকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মৃত তজমল ইসলামের ছেলে দবিরুল ইসলাম প্রধানের কাছে প্রায় ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। গত দুই মাস আগে জুলফিকারের সভাপতির সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। টাকা ফেরত দিতে চাপ দেয় জাকিরুলের পরিবার। কিন্তু বিভিন্নভাবে হয়রানি ও টালবাহানা করে কালক্ষেপন করে আসছিলেন। ২০/২৫ দিন আগে জাকিরুলের বাবা দবিরুল ইসলাম প্রধান জুলফিকারের কাছে টাকা ফেরত চাইতে যান। এসময় জুলফিকার
দবিরুলকে টাকা না দিয়ে উল্টো লাঞ্ছিত করেন এবং বটি দিয়ে মারতে উদ্ধত হন। এসময় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অপমান সইতে না পেরে বাড়ি এসেই স্ট্রোক করে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন দবিরুল। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৭ আগষ্ট আবারও স্ট্রোক করেন তিনি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান দবিরুল। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি দবিরুলের লাশ প্রতারক জুলফিকারের বাড়িতে রেখে অনশন শুরু করেন।
পরিবার ও এলাকাবাসির অভিযোগ চাহিদামত টাকা দিয়েও ছেলেকে চাকরি দিতে না পারা এবং টাকা ফেরত না পাওয়ার টেনশনে ষ্ট্রোক করেন দবিরুল। টাকা না দেয়া পর্যন্ত লাশ দাফন করা হবে না মর্মে হুমকি দেন দবিরুলের পরিবারসহ স্থানীয়রা।
দবিরুল ইসলামের ছেলে আব্দুস সবুর প্রধান জানান, প্রধানপাড়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক আমানুল্লাহ স্যারসহ বিভিন্ন ব্যক্তির উপস্থিতি ও হাত দিয়ে আমার বাবা জুলফিকারের কাছে ১২ লাখ টাকা দিয়েছে। টাকা উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
দবিরুলের ছেলে জাকিরুল ইসলাম জানান, মাদরাসায় চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়ে জুলফিকারকে বাবা ১২ লাখ টাকা দিয়েছেন। জমিজায়গা, গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করে জুলফিকারকে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সে আমার চাকরিও দেয়নি টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। উল্টো বাবাকে লাঞ্ছিত করাসহ হয়রানি করেছে।
মৃত দবিরুলের ভাই বদিরুল ইসলাম জানান, চিন্তায় চিন্তায় ভাই বার বার ষ্ট্রোক করেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ পর্যন্ত মারাই গেলেন। প্রতারক জুলফিকারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন টাকা ফেরত না দেয়া পর্যন্ত লাশ দাফন হবে না।
অভিযুক্ত প্রতারক জুলফিকার আলম প্রধান নগদ ১ লক্ষ টাকা ফেরত দেন এবং ২ মাস পরে ৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অবস্থা কিছুটা শিথিল হয় এবং আজ সকাল ১০ টায় লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।