কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল।
মোঃ জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
আধিপত্য বিস্তার ও ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগর সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের আয়োজনে বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় পৃথক পৃথকভাবে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোড এলাকায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ির পাশে তার খালার বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতেও তাকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাত্ব জখম করা হয়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন রয়েছেন চ্যালেঞ্জ। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের আত্মীয় ওই ভাড়া বাড়ির লোকজন।
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিমেল মন্ডল বলেন, অদূরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। সেখানে আমাদের নেতা কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি'র সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। এমতাবস্থায়, জেলার রাজনীতিকে কলুষিত করা এবং জেলা ছাত্রলীগের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য আমাদের নেতা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর পরিকল্পিত ভাবে জামায়াত-বিএনপির অনুচর নামধারী ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি জানাচ্ছি।
জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান বলেন, সাধারণ সম্পাদক চ্যালেঞ্জের জনপ্রিয়তা ও সুশোভিত রাজনীতিতে হিংসায় পড়ে পরিকল্পিত ভাবে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে আমরা সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষীদের শাস্তি চাই।
দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আামন উল্লাহ আমান বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে আমরা দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগ অনশন-ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।
বুধবারের সমাবেশ থেকে সড়ক অবরুদ্ধ করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের সাবেক বর্তমান ছাত্রলীগ নেতারা। এসময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলার ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান এবং সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গুরুতর আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে মূলত বিরোধ সৃষ্টি হয়। বেশকিছু দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। গত কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়ায় এসেছি। দুপুরে জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যায়। সেখানে কয়েকজন আমাকে রেকি করছিল। সেখানে থেকে আমার খালার বাসায় যায়। সেখান গিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে আমাকে মারপিট করে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। আমার কি দোষ? আমার কি অপরাধ? আমি জামায়াত-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এটা কি আমার অপরাধ? তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করেছে। দল ক্ষমতায় থাকতেও আমি হামলার শিকার হলাম। আমি আমার নেতা হানিফ ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছি। করোনাকালীন সময়ে আমি ও আমার ছেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করেছি। তার এই প্রতিদান পেলাম। আমি বিচার চাই, বিচার চাই।
চ্যালেঞ্জ আরও বলেন, কমিটি নিয়ে নোংরামি চলছে। প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা আমাকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করতে চাই। হত্যার উদ্দ্যেশ্যেই আজকে সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে। তারা বলেছে, তোর কোনো বাপ তোকে বাঁচাতে পারবে না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু ও অজয় সুরেকা বাপ তোকে বাঁচাতে পারবে না।
এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজগর আলীর বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা, গুটি কয়েক নেতা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকাশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২২অক্টোবর কুষ্টিয়া সদর উপজলা, কুষ্টিয়া পৌরসভা, সরকারি কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ ও সরকারি পলিটেকনিক কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ গ্রুপের বিরোধ সৃষ্টি হয়। তার আগেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের ঝামেলা চলছিলো। এনিয়ে আগেও একাধিকবার হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হামলার চেষ্টা করে।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে খাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ তার খালায় বাসায় যান। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষে গল্প করছিলেন। এ সময় শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশী, ছাত্রলীগ নেতা অভি, সজলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিপক্ষের লোকজন ওই বাসায় গিয়ে চ্যালেঞ্জের খোঁজ করতে থাকে এবং হত্যার হুমকি দেয়। প্রাণের ভয়ে টয়লেটের ফলস ছাদে আশ্রয় নেন চ্যালেঞ্জ। প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করে এবং ফলস ছাদ থেকে চ্যালেঞ্জকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে। এসময় তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং ওই বাড়িতে ভাংচুর করে। এরপর তাকে লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে রাস্তায় নিয়ে আসে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথা, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে গুরুতর আহত করে।
প্রধান উপদেষ্টা: ইকবাল আহাম্মদ লিটন|
উপদেষ্টা:প্রফেসার সালেক নিক্সন
প্রকাশক-সম্পাদক এস এম ফিরোজ আহাম্মদ|
অফিস কার্যালয়: ৭০/১ শহীদ রফিক সড়ক মানিকগঞ্জ।|
ই-মেইলঃ ferozahmeed10@gmail.com|
ফোন নং :০১৯৬৮৮০০৮৩০|
ই পেপার