-ইকবাল আহমেদ লিটন:শোকের মাসে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মহাকালের মহামানব বঙ্গবন্ধু’কে ও তার স্ব পরিবারের সকলকে। সেই সাথে স্মরণ করছি সকল শহীদদের। যাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও নিজস্ব ভাষা। রবীন্দ্রনাথ যুগপুরুষের আবির্ভাবের কথা বলেছিলেন, যিনি হবেন দেশ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, যার মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠবে একটি জাতির স্বপ্ন, যিনি হবেন বাঙালি জাতির নবজন্মের মহানায়ক। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতে না হলেও বাঙালি জাতির সেই মহানায়কের আবির্ভাব ঘটে গত শতকের মধ্যভাগেই, যাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এক ব্যক্তির মধ্যে সমগ্র দেশ ও সমগ্র জাতির এমন প্রকাশ, এমন উদ্বোধন আর দেখা যায়নি, তিনি ধারণ করেছেন বাঙালির সমগ্র জীবন, সমগ্র চেতনা, সমগ্র প্রত্যাশা, যিনি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও আত্ম-আবিষ্কারের প্রতিষ্ঠা করেন। এ কথা’তো নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু’র জন্ম না হলে বাঙালির স্বাধীনতা হতো না কিংবা হলেও আরও কত শতাব্দী অপেক্ষা করতে হতো কে জানে? একটি জাতির আত্মপরিচয়ের গৌরব যিনি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করে গেছেন নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে, রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর অসামান্য কবি কল্পনায় এই মহানায়কেরই আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না, যে সময় মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে তখন বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ ছিল ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্নমাত্র, সেই দুঃস্বপ্নকে একদল নৃসংশ ঘাতক রোপণ করেছিল স্বাধীন বাংলার মাটিতে, ফলপ্রাপ্তির আশাও করেছিল, রোপণ করেছিল বটে, দৈহিকভাবে বঙ্গবন্ধু’কে হত্যা করেছিল ঠিকই, কিন্তু তাঁর মৃত্যু হয়নি, সেই দুঃস্বপ্নও প্রোথিত হয়নি এই মাটিতে, সফল হয়নি, মরেও অমর হয়ে আছেন তিনি, ইতিহাসের এই হচ্ছে অমোঘ সত্য। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুহীন, চিরঞ্জীব, কিন্তু কেন, এ কারণে যে বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ সমার্থক, ‘সে-ই ধন্য নরকুলে, লোকে যারে নাহি ভুলে, মনের মন্দিরে যারে সেবে সর্বজন’, বঙ্গবন্ধু সেই মহাপুরুষ, চিরস্মরণীয়। তাঁর মৃত্যু নেই।
আজ আমরা সেই বাঙালির মুক্তির দূত মহানায়ক বঙ্গবন্ধু’কে মুখেমুখে স্মরণ করি কিন্তু হৃদয়ে কতটুকু ধারন করেছি? কতটুকু দেশকে ভালবেসেছি? বঙ্গবন্ধু এখন আর কোন রাজনৈতিক আদর্শ নয়। তিনি এখন উচ্চ বিলাশী কর্পোরেট লিমিটেডের লোগো মাত্র। যার নাম ব্যবহার করে, সুনাম বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে উচ্চ বিলাশীরা কোটি কোটি টাকা। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন দুঃখি মানুষের মুখে হাসি কিভাবে ফুটানো যায়। বাংলার মানুষ কিভাবে সুখে থাকতে পারে। সাড়ে সাত কোটি মানুষের বঙ্গভুমি থেকে ১৭ তথা আঠারো ছুই ছুই কোটি মানুষের বঙ্গভুমিতে পরিনত হয়েছে। অথচ আজও বাঙালির মুখে হাসি নেই, উচ্ছাস নেই,স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ নেই। ভয়, আতঙ্ক, হতাশা আর লুটেদের মুখে পরেই বাঙালি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে দুঃখি বাঙালির সংখ্যা। বঙ্গবন্ধু কন্যা ছুটে চলেছেন পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত বাঙালির দুঃখকে চিরতরে ঘোচানোর জন্য কিন্তু তার ছুটে চলা ও পরিশ্রম দু’ই জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে অসাধুরা। আহ্ বাঙালির স্বপ্ন পুরণের ৫০ বৎসর কেটে গেলো। স্বপ্ন দ্রষ্টা মরে গেলো স্বপ্ন পুরণের আগেই। তাঁরপরে যারা স্বপ্ন পুরণের কথা বলতে এসে মিথ্যে আশ্বাসে, মিথ্যে ছলনায় দুঃখি বাঙালির হুজুগে আবেগ অনুভুতিকে পুঁজি করে নিজের মুখে হাসি ফুটাতে ব্যস্ত রয়ে গেলো। প্রিয় নেত্রীর আশেপাশে কাল সাপের আনাগোনা যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন প্রিয় নেত্রী সহ বাঙালির দুঃখ ঘুচবেনা। দুঃখি বাঙালি সারা জীবন দুঃখেই থাকবে সস্তা আর হুজুগে আবেগ থামাতে না পারলে।
যাইহোক, সত্যিকার অর্থে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের হাতে নেই। যদি আওয়ামীকে আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রণ করতো তাহলে এত এত নেতার ছড়াছড়ি আওয়ামী লীগে হতো না। অদৃশ্য কোন শক্তি আওয়ামী লীগকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলেই যে প্যান্ট পড়তে শিখে যাচ্ছে সে’ই নেতা হয়ে যাচ্ছে। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাংলাদেশে মানসিক ও নৈতিক উন্নয়ন না ঘটলে অনৈতিক কাজ গুলো হরহামেশায় চলতে থাকবে। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের দায়িত্বটা যেমন সরকারের উপর বর্তায় ঠিক তেমনিভাবে দেশের নীতি নৈতিকতাহীন নাগরিকদের মানসিক ও নৈতিকভাবে উন্নয়ন করার দায়িত্বটাও সরকারের উপর নির্ভর করে।তবে উল্লেখ্য যে সরকার তথা রাষ্ট্রযন্ত্র গুলিতে যদি অনৈতিকতার আছড় পরে বা আশ্রয় নেয় তাহলে স্বাভাবিকদৃষ্টিতেই রাষ্ট্রের জনগণ অনৈতিক ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পরে বা পরার কথা।
পরিশেষে: বঙ্গবন্ধু’কে হাতিয়ার ও লোগো বানিয়ে দেশ নিয়ে অপরাজনীতি আর নয়, বাংলার অবিসংবাদিত যে মহান নেতা, যার জন্ম না হলে এ নশ্বর পৃথিবীতে ‘বাংলাদেশ’ নামে এ স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধুর সেই জগৎ বিখ্যাত ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ এ ভাষণই ছিল মুক্তিযুদ্ধের গ্রিন সিগন্যাল। এ ভাষণ শোনার পর জাতি আর পিছপা হয়নি। তাই আসুন বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র সাথে হাতে হাত মিলিয়ে দেশ ও জাতিকে কল্যাণকর কিছু দিতে চেষ্টা করি।
-লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সদস্য সচিব আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ, অভিযোগ বার্তার প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক ,ইকবাল আহমেদ লিটন।