কলকাতা থেকে,দেবাশীষ রায়ঃ
এই স্টেশন্ এক সময় লালমনিরহাটের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত ছিল, সেখানেই সন্দেহজনক ভাবে বসে থাকা অবস্থায় রেল পুলিশের হাতে আটক হয় বাংলাদেশ থেকে আসা ছয় জন রোহিঙ্গা । এদের মধ্যে চার জন যুবতী ও দুই জন পুরুষ । প্রথমে জানা যায় তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারের অধিবাসী । তবে তাদের কাছে ইন্ডিয়ার আধার কার্ড বা পরিচয়পত্র ও পাওয়া যায় । পরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায়, তারা রোহিঙ্গা । .. এতে এখানকার মানুষের মনে হয়েছে রোহিঙ্গারা হয়ত আলিপুরদুয়ার শহরকে নিরাপদ যাতায়াতের পথ বলে মনে করছে । কারণ, আলিপুদুয়ারের এক পাশে রয়েছে আসাম আর অন্যদিকে ভুটান, যেখানে সাধারণ ভাবে পাসপোর্ট বা অনুমতি না নিয়েই চোরা পথে যাওয়ার ঘটনা অতীতে ঘটেছে অনেক । বন জঙ্গল ও জনবিরল এলাকা অনেক বেশী । তাই সেখানে গড়ে উঠেছিল জঙ্গী গোষ্ঠী গুলোর ট্রেনিং সেন্টার, মায়নামারেরই মতো ।হয়ত এমনি অসতর্কতাকে কাজে লাগানোর ছক কষেই এসেছিল রোহিঙ্গারা । জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ওই ছয় রোহিঙ্গা কোনভাবে আগরতলাতে পৌঁছায় , সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে নামে আলিপুরদুয়ারের কাছে কোন স্টেশনে । সেখান থেকে শিয়ালদহ ও হাওড়া হয়ে কাশ্মীরে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল । কোন কারণে শিয়ালদহের টিকিট থাকা সত্বেও তারা নেমে যায় আলিপুরদুয়ারে গভীর রাত্রে ।
প্ল্যাটফর্মে অসংলগ্ন ভাবে তাদেরকে চলাফেরা করতে দেখে কর্তব্যরত রেল বাহিনীর সন্দেহ হয়, তারা সেই ছয় জন কে তুলে দেয় রেল পুলিশের হাতে । দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের রোহিঙ্গা পরিচয় সামনে আসে, এবার পাওয়া যায় তাদের জাল আধার পরিচয় পত্র ও । পুলিসি তদন্তে উঠে এসেছে, ভুটানের নিকটবর্তী এক দালালের সুত্রে তারা ওই পরিচয়পত্র গুলো পায় । মনে করা হচ্ছে, শিয়ালদহের বদলে আলিপুরদুয়ারে নামার পর হয়ত তাদের ওই দালালের মাধ্যমে ভুটানে যাবার পরিকল্পনা ছিল । সেখান থেকে হয়ত কাশ্মীরে যাওয়া সহজ বলে তাদের বোঝানো হয়েছিল ।
এদিকে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গিয়েছে যে সেদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী দের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সাড়ে বারো লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে । ক্রমশ শরণার্থী সমস্যার সমাধানে বিদেশী সাহায্যের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে । এতো ক্ষুদ্র দেশের পক্ষে এই বিরাট পরিমাণ শরণার্থী দের খাদ্য ও বাসস্থান প্রদান করা ক্রমশই অসম্ভব হয়ে উঠেছে । এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্ব বৃহৎ শরণার্থী শিবির চট্টগ্রামের কুতুপালং । সেখানে দুদিন আগেই গুলি চলেছে, মারা গিয়েছে একজন, আহত হয়েছে আরো কয়েকজন । এই শরণার্থী রা জান বাজী রেখেও যে কোন জনারণ্যে মিশে যাবার জন্য উন্মুখ । তারই হয়ত একটা অংশ এই ছয়জন অনুপ্রবেশকারী ।