বাংলার বাঘ শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক যখন কবরে, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যখন আমাদের মাঝে নেই বাঙালী তখন দিশেহারা। কে ধরবে হাল, ঠিক সেই সময় বাংলা মায়ের আশীর্বাদ পুষ্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাব! হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পিছনে যার নাম চির স্মরণীয় চির ভাস্কর হয়ে আছেন তিনি আর অন্যকেউ নন তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালী জাতির অবিসাংবাদিত নেতা! প্রবল ভালবাসা, অসাধারণ দেশপ্রেম ও দুরদর্শী নেতৃত্ত্বগুণে তিনি সমগ্র বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন! এই দেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও সুশ্বাসন প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বহুবার গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ হন। তার জীবনের অর্ধেকেরও বেশী সময় বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জেল জুলুম সহ্য করেছেন।
মহান স্বাধীনতা বাঙ্গালী জাতির সবচেয়ে গৌরব ও গর্বের। স্বাধীনতা অর্জনে যে শহীদেরা আত্মত্যাগ করেছেন, নিজেদের প্রাণ বাজি রেখেছিলেন যে মুক্তিযোদ্ধারা, গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাঁদের স্মরণ করি। যে সব দেশ ও গোষ্ঠী মহানমুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সাহায্য করেছে তাঁদের জানাই কৃতজ্ঞতা। আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। মুক্তিযুদ্ধের কথা এলেই বারবার চলে আসে বঙ্গবন্ধুর কথা। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনায় তিনি যেমন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তেমনি যুদ্ধে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ছিল, যথাঃ ১। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিড়ে শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
২। মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি,
কর্মসংস্থান প্রভৃতি নিশ্চিত করে সমাজের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা।
৩। মুক্তচিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
৪। সকল নাগরিকের জন্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৫। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারসমূহ নিশ্চিত করা।
৭। বাঙ্গালীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
কিন্তু আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা মুক্ত স্বাধীন স্বদেশভূমি পেয়েছি, লাল সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তে আঁকা জাতীয় পতাকা পেয়েছি। অধিকার আদায়ের জন্যে আত্মসচেতন হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে এই মুক্তিযুদ্ধ। সমাজ জীবনে ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারী শিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের বিকাশ, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা ও কথাসাহিত্যে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে তার বড় অবদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। গণসচেতনতামূলক গান, নাটক, চলচ্চিত্র ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। তবে উল্লেখ্য যে, আশানুরূপ ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা গৌরবগাঁথা সাহিত্যে আজো প্রতিফলিত হয়নি। স্বাধীনতার পর বার বার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুব সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যকলাপ বারবার সংঘটিত হচ্ছে প্রশাসনের ভেতর এবং বাইরে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজো তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সমাজে সমাজ- বিরোধী ব্যক্তির যে সম্মান, যে প্রতিপত্তি, সেখানে একজন জ্ঞানী, সৎ মানুষের মূল্য তুচ্ছ। সমাজে সততা আজ লাঞ্চিত এবং অসহায়। বিবেক সেখানে বিবর্জিত, অথচ কতিপয় জ্ঞানী-গুণী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও তাদের খাতির করে। রাজনৈতিক নেতাদের তারা ডান হাত। জঘন্য, নিষ্ঠুর কাজকর্ম করেও তারা আইনের আওতায় আসছে না। কিন্তু সমাজে যারা অপরাধকর্মে লিপ্ত তাদের জন্যে কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাধীনতা অর্জন খুবই গৌরবের ও আনন্দের ব্যাপার এবং স্বাধীনতা জাতীয় জীবনের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন হলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না বরং তখন বিজয়ী জাতির সামনে আসে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম। এ সংগ্রামে আরো বেশী ত্যাগ- তিতিক্ষা ও শক্তি- সামর্থ্যরে প্রয়োজন হয়। কারণ স্বাধীন দেশের ভেতরে ও বাইরে শত্র“র অভাব নেই। এরা সুযোগের সন্ধানে সর্বক্ষণ তৎপর থাকে। যে কোন সময় সুযোগ পেলে হিংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে দিতে চায়। সুতরাং স্বাধীনতাযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও তাদের অনুচরদের এবং বহিঃ শত্র“র হাত থেকে স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বকে রক্ষায় আমাদেরকে সদা সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। স্বাধীনতা রক্ষা ও ফলপ্রসু করা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে কঠিন কাজ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে ভোট দিয়ে দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ প্রায় চুরান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা- চেতনায় দেশাত্ববোঁধ, জাতীয়তাবোঁধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলী যথা, ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক- চেতনাবোঁধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা সৎ জীবন,যাপনের মানসিকতা, সৌহদ্রতা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে বর্তমান সরকার একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে।
লেখক পরিচিতিঃ ইকবাল আহাম্মদ লিটন।
সাবেক ছাএলীগ নেতা,সদস্য সচিব আয়ারল্যান্ড আওয়মী লীগ ও উপদেষ্টা সম্পাদক বার্তা ২৪ টিভি।