অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও এর বাস্তবায়ন -ইকবাল আহমেদ লিটন
একজন খোকা থেকে মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও বিশ্বনেতা! বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রধানেরা মনে করতেন ও করেন, তিনি একজন বিপ্লবী নেতা। আসলেই তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা, বিচক্ষণ, প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ দেশের শোষিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত বাঙালিকে মুক্তি দিতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই মুক্তির ডাক ছিল মূলত রাজনৈতিক মুক্তি। এটা ছিল তার প্রথম বিপ্লব। প্রথম বিপ্লবে জয়ী হয়ে তিনি পরিকল্পনা করলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের। কি ছিল সেই দ্বিতীয় বিপ্লবের মন্ত্র? নতুন প্রজন্ম কি জানে সেই বিপ্লবের মন্ত্র?
দেশপ্রেমিক নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, সেই দ্বিতীয় বিপ্লবের মন্ত্র। কারণ এই দ্বিতীয় বিপ্লবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর শপথ নেবার দিন ছিল ১৫ আগস্ট। কেন সেইদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল জাতির জনককে? তবে কি দ্বিতীয় বিপ্লব সফল হলে বঙ্গবন্ধু পরিণত হতেন বিশ্বের অন্যতম নেতা। ষড়যন্ত্রকারীরা কি তবে আগাম উপলব্ধি করতে পেরেছিল, এই দ্বিতীয় বিপ্লবের ফলাফল?
বঙ্গবন্ধুর এই দ্বিতীয় বিপ্লব ছিল বাঙালির অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির মন্ত্র। দেশ স্বাধীন হলো, বঙ্গবন্ধু সব রাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন, নিজে গেলেন সবার দরজায়। কারণ এ দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এর বিকল্প ছিল না। সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন তাকে কিন্তু সঙ্গে জুড়ে দিলেন শর্ত। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব কেউই শর্তের বাইরে নয়। বঙ্গবন্ধু বুঝলেন স্বনির্ভর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। পাট তখন অন্যতম অর্থকারী ফসল। কিউবার কাছে প্রায় দুইশকোটি টাকার পাট রপ্তানি করা হলো। এতে বিরাগভাজন হলো বিশ্বের একটি পরাশক্তির দেশ। কারণ কিউবা ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশ। ফলাফল স্বরূপ এ দেশের উদ্দেশ্যে খাদ্য সাহায্য নিয়ে আসা জাহাজ মাঝ পথেই সাগরে ফেলে দেওয়া হলো। সারাবিশ্বে তখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। প্রকৃতিও যেন বিমাতাসুলভ আচরণ করা শুরু করল। অর্থনৈতিকভাবে প্রায় ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন মাথা তুলে দাঁড়াবার প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছেন; তখন বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাকে গ্রাস করে ফেলল।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি তখন চলছিল মনুষ্য সৃষ্টি অরাজকতা। জনগণের মুক্তির কথা বলে চীনপন্থি কমিউনিস্ট পার্টির এদেশীয় সহযোগিরা সর্বহারা বিপ্লবের নামে পাটের গুদামে আগুন ও ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছিল। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর এইভাবে কমপক্ষে তিনশ কোটি (তৎকালীন অর্থমূল্যে) টাকার অর্থকারী ফসল পাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ে রাজনৈতিক দল জাসদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বলতে তারা কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেটি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল। সর্বহারা বিপ্লবের নামে দেশে একটি অরাজক অবস্থার অবতারণা করে তারা।
বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন। বাঙালি জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি বাস্তবমুখী পরিকল্পনা করেছিলেন। এটাই ছিল তার দ্বিতীয় বিপ্লবের মন্ত্র। বলা যায়, একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। স্বাধীনতাত্তরকালে এ দেশে যে ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু ছিল তা ছিলো দুর্বল ও ভঙ্গুর। উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। দেশে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা ছিল সামন্ততান্ত্রিক ধাঁচের। উৎপাদনে লাঙল, জোয়াল, গরু খাদ্য চাহিদা ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে অক্ষম। উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, প্রান্তিক পুঁজিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মতো সক্ষমতা তখন এদেশে ছিল না। ফলে, এদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তার দ্বিতীয় বিপ্লবের রূপরেখা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একটি রাষ্ট্রকে স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বনির্ভর অর্থনীতির ওপর দাঁড় করতে হলে ‘বাকশাল’ (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) নীতির বিকল্প ছিল না। এই নীতি বাস্তবায়ন ছিল সময়ের দাবি। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তি জীবনের আচার আচরণের প্রথা সাংস্কৃতিকভাবে এটিতে প্রমাণিত হয়েছিল, তিনি কতটা গণমানুষের নেতা ছিলেন। তিনি সবসময় চিন্তা করতেন একটি শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সামন্ততান্ত্রিক কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে একটি যন্ত্রনির্ভর অর্থনীতি প্রবর্তন করতে চেয়ে ছিলেন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। এই উদ্দেশ্যে তিনি তৎকালীন বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে ট্রাক্টর নিয়েছিলেন। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি করেছিলেন। পোল্যান্ড, কিউবার সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি পরিবর্তন করে প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতি চালু করার স্বক্ষমতা দেখে উজ্জীবিত হয়ে নিজ দেশে প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে অর্থনীতিকে সু-সংগঠিত করতে যে ধরনের বাস্তবমুখী ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধু সেই কাজটি করে ছিলেন। তিনি দূরদর্শিতার সঙ্গে এই পদক্ষেপের সাফল্যের সূর্য আগাম দেখতে পেয়েছিলেন। দূর থেকে এই সূর্যের রশ্মীটি পশ্চিমা অশুভশক্তি দেখতে পেরেছিল । তারা ভেবেছিল, তার মতো এই নেতাকে যদি জনগণের মধ্যে থেকে সরিয়ে ফেলা হয় তবে আবার বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আটকানো যাবে। ফলে বাঙালি জাতিকে অভিবাবকহীন হতে দেরি করেনি তারা। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করবেন তারই সুযোগ্য কন্যা। বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর এটাই আমাদের আশা ও শক্তির প্রেরণা। সম্পূর্ণ বিবরণ নিন্মে দেয়া হলোঃ
#এখন_আসি_মুল_বিষয়েঃ
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব বাস্তবায়নের পথে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা!! বাঙালি জাতির গৌরব ও গর্বের ইতিহাস আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি জাতির অহংকার এবং বাঙালি জাতির ইতিহাস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রাম বাংলার অজয় পাড়াগাঁয়ে জন্ম নেয়া এই মহান নেতা তার অসীম সাহসে বলিষ্ঠ নের্তৃত্ব দেন